নির্বাচনি আচরণবিধি ভঙ্গের দায়ে কুমিল্লা-৬ আসনের আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থী আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারকে এক লাখ টাকা জরিমানা করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
বুধবার রাজধানীর আগারগাঁও নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন কমিশনের শুনানি শেষে তাকে এই জরিমানা করা হয়।বিষয়টি নিশ্চিত করে ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, আগামী তিন দিনের মধ্যে তাদেরকে ট্রেজারি চালানের মাধ্যমে জরিমানার এই অর্থ রিটার্নিং কর্মকর্তাকে বুঝিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।পরে রিটার্নিং কর্মকর্তা বিষয়টি ইসিকে জানাবেন।
নির্বাচন কমিশনের শুনানিতে হাজির হয়ে বক্তব্য তুলে ধরার পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার।তিনি নির্বাচন কমিশনের শুনানিতে এসে আচরণবিধি লঙ্ঘনের ঘটনায় আনা অভিযোগের ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, তার প্রার্থিতা বাতিলের সুযোগ নেই।
ভোটের প্রচার শুরুর পর থেকে বাহারের বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযোগ আসতে থাকে। এর মধ্যে সোমবার তাকে কমিশনে হাজির হয়ে নির্বাচনি আচরণবিধি ভঙ্গের ব্যাখ্যা দিতে তাকে নোটিশ দেওয়া হয়।নোটিশে তার কাছে জানতে চাওয়া হয়, কেন তার প্রার্থিতা বাতিল হবে না।
এর দুই দিন আগে শনিবার নির্বাচন কমিশনার আনিছুর রহমান বলেছিলেন, প্রার্থিতা বাতিল হতে পারে কোনো না কোনো জায়গায় কারো না কারো, এইটুকু আভাস আমি দিয়ে রাখলাম।এই বক্তব্যের পর বাহারের এই শুনানি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা তৈরি হয়। আজ শুনানি শেষে কমিশন তার প্রার্থিতা বাতিল করার মতো কোনো সিদ্ধান্তে না গিয়ে তাকে এক লাখ জরিমানা করে।
শুনানি শেষে সাংবাদিকদের বাহার বলেন, ‘আমার বক্তব্যে আমি ইসিকে কনভিন্সড করতে পেরেছি। প্রার্থিতা বাতিল হওয়ার সুযোগ নেই।’
এ সময় বাহারের আইনজীবী মঞ্জুরুল হক বলেন, ‘ইসিতে আমাদের বক্তব্য হচ্ছে, প্রার্থিতা বাতিলের মতো বিধান লঙ্ঘন এখন পর্যন্ত উনার (বাহার) দ্বারা হয়নি। নির্বাচনে অযোগ্য হওয়ার মতো কোনো কিছু তিনি করেননি।তিনি কোনো অপরাধ করেননি। সেজন্য প্রার্থিতা বাতিলের ধারাটি উনার জন্য প্রযোজ্য হবে না।’
বাহারকে দেওয়া ইসির চিঠিতে বলা হয়েছিল, গত ২০ ডিসেম্বর নির্বাচনি প্রচারণার সময় তিনি সাংবাদিকদের অকথ্য ভাষায় গালাগাল করেন। তার উসকানিমূলক নির্দেশনায় ব্যক্তিগত সহকারীসহ নেতাকর্মীরা দুই সাংবাদিককে মারধর করেন।ওই সংবাদকর্মীদের অফিশিয়াল মোবাইল ফোন এবং লাইভ কাভারেজের ডিভাইসও ছিনিয়ে নেওয়া হয় বলে সংবাদ প্রকাশিত হয়। পরে ইসির নির্দেশে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও পুলিশ সুপার আলাদা তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন, যাতে ঘটনার সত্যতা পাওয়ার কথা বলা হয়েছে।এরপর বাহার নির্বাচনি অপরাধ ও আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছেন উল্লেখ করে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে সুপারিশসহ ইসিতে প্রতিবেদন পাঠায় সংশ্লিষ্ট নির্বাচনি অনুসন্ধান কমিটি।
সাংবাদিক মারধরের অভিযোগ সঠিক নয় দাবি করে বাহার বলেন, ‘একটা ভুয়া অভিযোগ। মুক্তিযুদ্ধ করে ৫০ বছর পর সাংবাদিককে ধর ধর বলতে হবে- এত নিচে নেমে আমি রাজনীতি করি না।’
বিএনপি-জামায়াতের কর্মীকে কোনো প্রার্থীর পক্ষে পাওয়া গেলে তাদের হাত-পা ভেঙে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়ার অভিযোগের বিষয়ে বাহার বলেন, ‘আবেগপ্রবণ হয়ে মানসিক জোর বাড়াতে এ কথা বলেছি।’
নৌকার এই প্রার্থী বলেন, যেদিন তিনি বক্তৃতা দেন- তার ঠিক আগের দিন একজন রিকশাওয়ালা মারা যান। পত্রিকায় তিনি এভাবে পেয়েছিলেন, একজন রিকশাওয়ালা তার সন্তানদের লেখাপড়া করান। তিনি সেদিন একটি গ্যারেজে ঘুমিয়েছিলেন। সেখানে আগুন দেওয়া হয়। কারণ তারা (বিএনপি) নির্বাচন প্রতিহত করতে চায়। অগ্নিদগ্ধ হওয়ার পর দুদিন হাসপাতালে কষ্ট পেয়ে তিনি মারা যান।বাহার আরও বলেন, ট্রেনের চারটি বগি লাইনচ্যুত হয়েছে। একজন নারী ও একটি শিশু মারা গেছে। এগুলো আমাকে মানসিকভাবে যন্ত্রণা দিয়েছে। যারা নির্বাচন প্রতিহত করতে চায়, তাদের বিষয়ে বলেছিলাম। তারা তো প্রতিহতের নামে মানুষ হত্যায় লিপ্ত। ২০১৪ সালে তারা চার থেকে পাঁচশ ভোটকেন্দ্র জ্বালিয়ে দিয়েছিল। যাতে ওই কাজগুলো তারা না করতে পারে, সে জন্য মানসিক জোর বাড়াতে এমন কথা বলেছিলাম।
তিনি বলেন, আমি এত বেশি আবেগপ্রবণ হয়ে গিয়েছিলাম। মনে হয়েছে কিসের রাজনীতি আমরা করি, মানুষ হত্যার রাজনীতি করি? আমরা তো প্রোগ্রাম করি, আমরা তো মানুষ হত্যার রাজনীতি করি না।নির্বাচন কমিশনের কাছে এই অভিযোগ স্বীকার করে এমন রাজনৈতিক বক্তব্য দেব না বলেছি।