দ্বাদশ নির্বাচনে ভোটের মাঠে আগামী ৩ জানুয়ারি থেকে মাঠে নামছে সশস্ত্র বাহিনী। ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত মোট ৮ দিন তারা আইনশৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে মাঠে থাকবে। এজন্য ২৯ ডিসেম্বর একটি সমন্বয় সেল গঠন করা হবে। এক্ষেত্রে তাদের অগ্রবর্তী টিমও মাঠে নামবে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের জন্য। সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসারের পক্ষে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এইচএম মাসীহুর রহমান এ সিদ্ধান্তের কথা নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সচিবকে এক চিঠিতে জানিয়েছেন।
এর আগে ১৮ ডিসেম্বর ইসির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল, ২৯ ডিসেম্বর থেকে নির্বাচনি মাঠে সশস্ত্র বাহিনী দায়িত্ব পালন করবে। অন্যদিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল জানিয়েছেন, ২৯ ডিসেম্বর থেকে মাঠে থাকবে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।
সশস্ত্র বাহিনীর চিঠিতে বলা হয়েছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন-২০২৪ অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশনের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তার নিমিত্তে ইন এইড টু সিভিল পাওয়ারের আওতায় সমগ্র বাংলাদেশের ৩০০টি নির্বাচনি এলাকায় আগামী ৩ থেকে ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত (যাতায়াত সময়সীমা ব্যতীত) সশস্ত্র বাহিনী নিয়োজিত থাকবে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ২০২৪-এর দায়িত্ব পালনের জন্য সশস্ত্র বাহিনীর নিয়োজিত দলগুলো ফৌজদারি কার্যবিধি ও অন্যান্য আইনি বিধান এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের জারি করা বিধান অনুযায়ী পরিচালিত হবে।
যেভাবে পরিচালিত হবে সশস্ত্র বাহিনী : সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা প্রতিটি জেলা/উপজেলা/মেট্রোপলিটন এলাকার নোডাল পয়েন্ট এবং সুবিধাজনক স্থানে নিয়োজিত থাকবে। রিটার্নিং অফিসারের সঙ্গে সমন্বয় করে জেলা/উপজেলা/থানায় সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের মোতায়েন করা হবে। সশস্ত্র বাহিনীর টিমের সঙ্গে রিটার্নিং অফিসার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করবেন এবং আইন, বিধি ও পদ্ধতিগতভাবে কার্যক্রম গৃহীত হবে। সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং অফিসারের অনুরোধক্রমে ও সমন্বয়ের মাধ্যমে এলাকাভিত্তিক ডেপ্লয়মেন্ট প্ল্যান (মোতায়েন ছক) চূড়ান্ত হবে। বাস্তবতা ও প্রয়োজন অনুযায়ী রিটার্নিং অফিসার ও সহকারী রিটার্নিং অফিসারের অনুরোধক্রমে চাহিদামতো আইনি অন্যান্য কার্যক্রম সম্পাদন করা হবে।
চিঠিতে বলা হয়েছে, ভোটগ্রহণের দিন, তার আগে ও পরে কার্যক্রম গ্রহণ ও মোতায়েনের সময়কালসহ বিস্তারিত পরিকল্পনা শিগগিরই জানানো হবে। নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাচনের কয়েকদিন আগে থেকে নির্বাচনি এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা, ভৌত অবকাঠামো এবং নির্বাচনি পরিবেশ পরিস্থিতির ওপর প্রাথমিক তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করার নিমিত্তে অগ্রগামী/রেকিদল পাঠানো যাবে। ২৯ ডিসেম্বর থেকে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগে একটি সমন্বয় সেল পরিচালনা করা হবে। এছাড়া বাহিনীগুলো প্রয়োজন অনুযায়ী সমন্বয় সেল স্থাপন ও পরিচালনা করবে।
২৯ ডিসেম্বর বিজিবি মোতায়েন : মঙ্গলবার সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল জানিয়েছেন, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষ্যে ২৯ ডিসেম্বর থেকে সারা দেশে বিজিবি সদস্যদের মোতায়েন করা হবে। বিজিবির পরপরই আর্মি চলে আসবে। কাজেই আপনারা যেসব আশঙ্কা করছেন এবং যেগুলো দেখছেন, সেসব পরিস্থিতি আরও শান্ত হয়ে সুন্দর পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে।
রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, নির্বাচনকে আরও নিরাপদ করতে দীর্ঘ সময় মাঠে থাকবে সেনাবাহিনী। ঝুঁকিপূর্ণ আসন ও কেন্দ্র নিয়ে নির্বাচন কমিশন তালিকা দিয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সতর্ক অবস্থানে রয়েছে, পরিস্থিতি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি আরও বলেন, সব নির্বাচনেই নির্বাচন কমিশন কিছু ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রের তালিকা করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সতর্ক থাকতে বলেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বিএনপি জানে জনগণ তাদের ভোট দেবে না। এজন্য তারা ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য অন্য পন্থা অবলম্বন করেছে। তিনি আরও বলেন, তারা হুঙ্কার দিচ্ছে জনগণ ভোট বর্জন করবে। আপনারা এসে দেখেন কী উৎসবের আমেজ এসেছে দেশে। সারা দেশে ভোটের আমেজ বিরাজ করছে, তাদের কথা কেউ শুনছে না।
আসাদুজ্জামান খান বলেন, দেশকে এগিয়ে নিতে প্রধানমন্ত্রী যা যা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, সবগুলোই সঠিক। ২০০৮ সালে তিনি বলেছিলেন, বাংলাদেশ বদলে দেবেন, আসলেই তিনি বাংলাদেশকে বদলে দিয়েছেন। তিনি বাংলাদেশকে দুর্বার গতিতে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। পৃথিবীর অনেক দেশের কাছেই এখন বাংলাদেশ রোল মডেল।