বিএনপি-জামায়াতের ডাকা হরতাল-অবরোধ নিয়ে ফেসবুকে এক বিবৃতি পোস্ট করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
বৃহস্পতিবার প্রকাশিত এই পোস্টে তারা বলেছে, বিএনপি-জামায়াতের ডাকা অবরোধের সময় রেলওয়েতে নাশকতা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা, আসন্ন নির্বাচন ও দেশের অগ্রগতি ব্যাহত করার লক্ষ্যে রাষ্ট্র ও জনগণের ওপর সরাসরি হামলা।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে ইংরেজিতে দেওয়া এই পোস্টে বলা হয়, বিএনপি-জামায়াত জোটের কর্মকাণ্ড রাজনৈতিক অস্থিরতা ছাড়িয়ে গেছে। তারা নাগরিকদের শারীরিক ক্ষতি করা ছাড়াও সরকারের সম্পত্তির ব্যাপক ক্ষতি করেছে। যখন নির্বাচন ঘনিয়ে আসছে, তখন সরকার ও বাংলাদেশের মানুষ সন্ত্রাস ও এ ধরনের সহিংস কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান নিয়েছে।
এতে বলা হয়, এসব চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও বাংলাদেশ সরকার ও জনগণ শান্তি বজায় রাখতে এবং দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন অব্যাহত রাখার জন্য বদ্ধপরিকর।
পোস্টে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি একটি অংশগ্রহণমূলক ও অত্যন্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ জাতীয় নির্বাচনের উৎসবমুখর মৌসুমে প্রবেশ করেছে। এদিকে জাতি বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া নস্যাৎ করার জন্য একটি স্বার্থান্বেষী মহলের জোরদার প্রচেষ্টা লক্ষ্য করছে।
জনসমর্থন ও রাজনৈতিক সমর্থন আদায়ে ব্যর্থ হওয়ার পর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) একটি অংশ ও তাদের মিত্ররা অবরোধ কর্মসূচি কার্যকর করার জন্য তাদের তৎপরতা জোরদার করেছে, তাদের লক্ষ্য আসন্ন নির্বাচনে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা। বিএনপির এই কৌশলগত পদক্ষেপে সারা দেশে নাশকতা ও অগ্নিসংযোগ করার ঘটনা বেড়েছে। তাদের বিতর্কিত দাবি আদায়ের জন্য তাদের সমর্থকরা আতঙ্ক সৃষ্টি করতে এবং সরকারের ওপর অযাচিত চাপ প্রয়োগ করার জন্য এসব ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়েছে।
এসব সহিংসতার একটি উজ্জ্বল নজির হচ্ছে ২০২৩ সালের ১৩ ডিসেম্বর, যখন বিএনপি-জামায়াত কর্মীরা ইচ্ছাকৃতভাবে রেললাইনের ২০ ফুট অংশ সরিয়ে দেয়। এই নাশকতার ফলে বাঁখারিয়ার কাছে মর্মান্তিকভাবে ঢাকাগামী মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনটি লাইনচ্যুত হয়। ভোর ৪টার দিকে এ দুর্ঘটনায় একজনের মৃত্যু হয় এবং আহত হয়েছেন অর্ধশতাধিক যাত্রী।
এ দুর্ঘটনাটি বিএনপির ডাকা ৩৬ ঘণ্টার অবরোধের সরাসরি পরিণতি। দেশের স্থিতিশীলতা ব্যাহত করার লক্ষ্যে এই দলগুলো কোন বিপজ্জনক পর্যায়ে যেতে পারে এটি তার উদাহরণ।
এদিকে আবারও ১৯ ডিসেম্বর ঢাকার তেজগাঁও রেলস্টেশন এলাকায় মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনে তিনটি কোচে নাশকতাকারীরা অগ্নিসংযোগ করে এক নারী ও তার তিন বছরের ছেলেসহ অন্তত চার যাত্রীকে হত্যা করেছে।
বিএনপি-জামায়াত জোটের কর্মকাণে্ডর রাজনৈতিক অস্থিরতা ছাড়িয়ে গেছে; তারা নাগরিকদের শারীরিক ক্ষতি এবং সরকারের সম্পত্তির ব্যাপক ক্ষতি করেছে। পুলিশ ও জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা রেল ট্র্যাক বিচ্ছিন্ন করতে ব্যবহৃত গ্যাস সিলিন্ডারসহ ঘটনার সঙ্গে গ্রুপগুলোর সম্পৃক্ততার বিষয়টি উদঘাটন করেছে।
ট্রেনে লক্ষ্যবস্তু করে হামলার এই ধরন নতুন নয়। বিএনপি-জামায়াত জোট এর আগে ২০১৩ ও ২০১৫ সালের মধ্যে অনুরূপ সহিংস কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিল। তারা প্রায় ৪ হাজার যানবাহন এবং একাধিক রেল গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করেছিল। এই ধরনের কৌশলের সাম্প্রতিক পুনরুত্থান তাদের ধ্বংসাত্মক পথে ফিরে আসার ইঙ্গিত দেয়।
গত ২৮ অক্টোবর থেকে বিএনপির সরকারবিরোধী সমাবেশের ফলে দেশব্যাপী প্রায় ৪০০ গাড়ি পোড়ানো হয়েছে। নির্বাচনকে সামনে রেখে হরতাল-অবরোধ ডাকার কৌশল তাদের অতীত কর্মকাণ্ডের পুনরাবৃত্তি।
তাদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সাধনে বিএনপি-জামায়াত জোট শুধু শারীরিক ক্ষতি এবং সম্পত্তির ক্ষতিই করেনি বরং পুলিশ হাসপাতাল ও অ্যাম্বুলেন্সসহ অপরিহার্য পরিষেবার ওপরও আক্রমণ করেছে।
এতে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উঠেছে— বিএনপি-জামায়াত জোটের কর্মকাণ্ড কি রাজনৈতিক মতপ্রকাশের একটি বৈধ উপায়, নাকি তারা মানবাধিকার ও জননিরাপত্তার গুরুতর লঙ্ঘন করছে?
সর্বশেষ মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস দুর্ঘটনায় ট্রেন লাইনচ্যুত হওয়ার পর স্থানীয় প্রশাসন, পুলিশ এবং দমকল বিভাগ দ্রুত সাড়া দিয়েছে। নাশকতার সঙ্গে জড়িত সন্দেহভাজন দুজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তদন্তে ধারণা করা হচ্ছে যে, এই কাজটি পূর্বপরিকল্পিত ছিল। এই মারাত্মক কাজটির পরিকল্পনা করার জন্য মিটিং অনুষ্ঠিত হয়েছিল।